ভাবুন তো, শেষ কবে শুধু নিজের কথা ভেবে শান্তিতে সময় কাটিয়েছেন? ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া কি আপনাকে সেই সুযোগটা দিচ্ছে?

ফেসবুকের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।

এটা দুনিয়ার সব সমস্যাকে আপনার সমস্যা বানিয়ে দেয়। আপনার নিউজফিড ভরা থাকবে ট্রল, তর্ক বিতর্ক, অশ্লীলতা রাজনীতি, বা কারও জীবনের সুখ-দুঃখের গল্পে। আপনি না চাইলেও এগুলো আপনার মাথায় ঢুকে যায়।https://askbdnow.com

আর শুধু কি তাই?

ফেসবুক আপনার সবচেয়ে দামি জিনিসটা ধীরে ধীরে খেয়ে ফেলে— সময়।

আপনার হয়তো ৫ মিনিটের জন্য ঢোকা, কিন্তু স্ক্রল করতে করতে কখন ৩০ মিনিট পেরিয়ে গেছে, বুঝতেও পারেন না।

ফোকাস? সেটাও ধ্বংস।

কাজের মাঝে ফেসবুক খুললেন— হঠাৎ একটা পোস্ট দেখলেন, সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। যে কাজটা ১ ঘণ্টায় শেষ করার কথা, সেটা এখন সারাদিন লেগে যাচ্ছে।

আর ঘুম?

অনেকেই রাতের বেলা ফোন নিয়ে শুয়ে ফেসবুক স্ক্রল করতে থাকেন। ঘণ্টা পার হয়ে যায়, ঘুম আসে না। সকালে উঠে ক্লান্তি, দিনভর মনোযোগহীনতা।

এখন কী করবেন?

১. নিয়ম তৈরি করুন।

ফেসবুক ব্যবহারে সময়ের একটা সীমা থাকা জরুরি। আপনি দিনে কতক্ষণ ফেসবুকে থাকবেন সেটা আগে থেকেই ঠিক করে নিন। উদাহরণস্বরূপ, কাজের সময় বা পড়াশোনার মাঝে ফেসবুক থেকে দূরে থাকুন। সকাল বা রাতে স্ক্রল করার অভ্যাস থাকলে সেটা কমানোর চেষ্টা করুন। এক্সপার্টরা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিটের বেশি সময় দিলে সেটা ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়।

২. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকুক।

আপনার জীবনে ফেসবুকের ভূমিকা কী? এটা যোগাযোগের জন্য, কাজের জন্য, নাকি শুধুই বিনোদনের জন্য? এই প্রশ্নটা নিজেকে করুন। শুধু সময় কাটানোর জন্য ফেসবুকে ঢোকা মানে নিজের সময় নষ্ট করা। বরং ফেসবুক ব্যবহার করুন আপনার জীবনের কোনো প্রয়োজন মেটানোর জন্য। উদাহরণস্বরূপ, কাজের গ্রুপে আপডেট দেখুন বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানুন।

৩. বিজ্ঞতার সঙ্গে এড়িয়ে চলুন।

ফেসবুকের প্রতিটা নিউজ, বিতর্ক, বা ট্রেন্ডে জড়ানো জরুরি নয়। এসব দেখে যদি আপনার মন খারাপ হয় বা মানসিক চাপ বাড়ে, তাহলে সেগুলো এড়িয়ে চলুন। সব পোস্ট বা কমেন্ট সেকশনে ঢুকতে হবে না। আপনার যা দরকার, সেটুকু দেখুন। বাকিটা স্ক্রল না করাই ভালো।

৪. ঘুমের সময় ফেসবুক নয়।

রাতের বেলা ঘুমানোর আগে ফেসবুক স্ক্রল করলে আপনার ব্রেন বিশ্রাম নিতে পারে না। স্ক্রিনের আলো মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, যার কারণে ঘুম আসতে দেরি হয়। তাই ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে ফোন সরিয়ে রাখুন। চাইলে ফোনটি আরেক ঘরে রেখে দিন।

৫. বুঝে শুনে ফলো করুন।

ফেসবুকে যাদের ফলো করছেন, তারা কি আপনাকে কোনো মানসিক শান্তি বা প্রেরণা দিচ্ছেন? যদি না দেন, তাহলে ভেবে দেখুন তাদের ফলো করা উচিত কি না। এমন মানুষদের ফলো করুন যারা ইতিবাচক, জ্ঞানবর্ধক বা অনুপ্রেরণামূলক পোস্ট করেন। এর ফলে আপনার নিউজফিড শুধু সময় নষ্ট করার জায়গা হবে না, বরং আপনার উন্নতির সহায়ক হবে।

ফেসবুক আমাদের জীবনের অংশ হতে পারে, তবে পুরো জীবন নয়।

সময়, ফোকাস, আর মানসিক শান্তি— এগুলো আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ।

ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া যেন এগুলো চুরি করতে না পারে।

জীবনটা আপনার হাতে থাকুক, ফেসবুকের হাতে নয়।