নারীদের খতনা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

নারীদের খতনা (Female Circumcision) সম্পর্কে ইসলামে ভিন্নমত রয়েছে। ইসলামী শরীয়তে এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তবে কিছু হাদিসে একে সুন্নত বা সম্মানজনক কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

১. হাদিস ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ

কিছু হাদিসে নারীদের খতনার প্রসঙ্গ এসেছে, তবে এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ফকিহদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

একটি হাদিসে বলা হয়েছে:
“খতনা করো, তবে বেশি কেটে ফেলো না, কারণ এটি স্বামীর জন্য আনন্দদায়ক এবং স্ত্রীর জন্য উপকারী।” (আবু দাউদ: ৫২৭১)

তবে অনেক মুহাদ্দিস এই হাদিসকে দুর্বল (ضعيف) বলেছেন।

২. চার মাযহাবের মতামত

হানাফি ও মালিকি মাযহাব: নারীদের খতনা করা আবশ্যক নয়, বরং এটি ঐতিহ্যগত অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত।
শাফেয়ী মাযহাব: এটি সুন্নাতে মুআক্কাদা বা বাধ্যতামূলক বলে মনে করেন।
হানাবলি মাযহাব: এটি পুরুষদের জন্য আবশ্যক (ওয়াজিব) এবং নারীদের জন্য সম্মানজনক (মুস্তাহাব) বলে মনে করেন।

৩. আধুনিক ফিকহ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

বর্তমানে অনেক ইসলামিক স্কলার ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা নারীদের খতনার বিরুদ্ধে মত দেন, কারণ এটি অনেকক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ইসলামে শরীরের ক্ষতি করা হারাম, তাই যদি এটি কষ্টদায়ক বা ক্ষতিকর হয়, তবে এটি এড়ানো উচিত।

৪. ইসলামি শিক্ষার মূলনীতি

  • ইসলাম শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে বলে।
  • যদি কোনো ইসলামী বিধান সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর হয়, তবে তা এড়ানো যায়।
  • ইসলাম কোথাও নারীদের খতনাকে পুরুষদের মতো বাধ্যতামূলক করেনি।

উপসংহার

নারীদের খতনা ইসলামে ফরজ বা ওয়াজিব নয়। এটি ঐতিহ্যগতভাবে কিছু সমাজে প্রচলিত, তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, এটি অনেকক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এটি করা বা না করা নির্ভর করে সংস্কৃতি, ফিকহের ব্যাখ্যা ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর।