ইসলামে গাছের প্রাণ থাকা বা না থাকা নিয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য নেই, তবে কুরআন ও হাদিসের আলোকে কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যা এই বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
১. কুরআনের দৃষ্টিকোণ
কুরআনে গাছ ও প্রকৃতিকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো আল্লাহর ইবাদত করে।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِّنَ النَّاسِ…
অর্থ:
“তুমি কি দেখো না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, পর্বত, বৃক্ষ, জীবজন্তু এবং মানুষের অনেকেই আল্লাহর কাছে সিজদা করে?”
(সূরা হজ: ১৮)
➡️ এখানে গাছকে (الشَّجَرُ) সিজদাকারীদের মধ্যে গণনা করা হয়েছে, যা বোঝায় যে গাছের একপ্রকার “সত্তা” বা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ক্ষমতা আছে।
২. হাদিসের দৃষ্টিকোণ
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে গাছ ও প্রকৃতির প্রতি দয়ালু হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যা বোঝায় যে গাছকে নিছক জড় বস্তু মনে করা হয়নি।
(ক) খেজুর গাছের কান্নার ঘটনা:
- একবার নবী (সা.) মসজিদে খেজুর গাছের গুঁড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। পরে যখন মিম্বার তৈরি করা হলো এবং তিনি সেখানে উঠলেন, তখন ওই খেজুর গাছ কান্না করছিল।
- রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে সান্ত্বনা দেন এবং বলেন যে, এটি তার সান্নিধ্য না পাওয়ার কারণে কষ্ট পাচ্ছে।
📖 (সহিহ বুখারি: ৩৫৮৩, সহিহ মুসলিম: ২৩২৫)
➡️ এটি বোঝায় যে গাছের একপ্রকার অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যদিও তা প্রাণীদের মতো নয়।
(খ) গাছ ও পাথরের সালাম দেওয়া:
- নবী (সা.) বলেছেন:
“মক্কার কোনো কোনো গাছ ও পাথর আমাকে সালাম দিতো, যখন আমি নবুওয়ত লাভের আগের সময় মক্কায় হাঁটতাম।”
📖 (সহিহ মুসলিম: ২২৭৭)
➡️ এটি বোঝায় যে গাছের একপ্রকার “সত্তা” আছে, যা আল্লাহর হুকুমে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
৩. ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি
- আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, গাছে কোষ ও বিপাকক্রিয়া (metabolism) থাকে, ফলে এটি প্রাণীর মতো কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য বহন করে।
- তবে ইসলামে “প্রাণ” বলতে সাধারণত আত্মা (রূহ) বোঝানো হয়, যা প্রাণীদের মধ্যে থাকে কিন্তু গাছে থাকার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট দলিল নেই।
উপসংহার
✅ গাছের একপ্রকার অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া আছে – কুরআন ও হাদিসে এর কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
✅ গাছও আল্লাহর ইবাদত করে এবং সৃষ্টিকর্তার হুকুম মানে।
✅ তবে গাছে আত্মা (রূহ) আছে কিনা – সে বিষয়ে ইসলামে স্পষ্ট দলিল পাওয়া যায় না।
আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, বলুন!