মুতাজিলা (معتزلة) বা মুতাযিলা হলো ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের একটি গোষ্ঠী, যারা যুক্তিবাদী (rationalist) চিন্তাধারার জন্য পরিচিত। তারা মূলত কালাম (Islamic theology) চর্চাকারী একটি দল ছিল, যারা ৮ম থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যে ইসলামী বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।
মুতাজিলাদের মূল বিশ্বাস ও দর্শন:
১. যুক্তিবাদ (Rationalism): তারা কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে যুক্তি ও দর্শনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করত এবং ঈমানের বিষয়গুলোকে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করত।
2. অধিকার ও ন্যায়বিচার (Divine Justice): আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ, তাই মানুষের মুক্ত ইচ্ছা আছে এবং তারা তাদের কাজের জন্য দায়ী।
3. তৌহিদের একত্ববাদ: তারা বিশ্বাস করত যে, আল্লাহর কোনো দেহগত বৈশিষ্ট্য নেই এবং তিনি সম্পূর্ণ অদ্বিতীয়।
4. কুরআন সৃষ্ট (Created Quran) তত্ত্ব: তারা মনে করত যে কুরআন সৃষ্টি করা হয়েছে, এটি চিরন্তন বা “অনাদি” নয়।
5. পাপ ও ঈমান: তারা বলত, একজন ব্যক্তি যদি বড় পাপ করে, তবে সে মুমিন ও কাফেরের মাঝামাঝি অবস্থায় থাকবে (আল-মাঞ্জিলা বাইন আল-মানজিলাতাইন)।
মুতাজিলা কারা ছিলেন?
মুতাজিলারা মূলত ইসলামের প্রাথমিক যুগের ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তাবিদদের একটি দল ছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন:
- ওয়াসিল ইবনে আতা (৭০০-৭৪৮ খ্রিস্টাব্দ): মুতাজিলা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলে বিবেচিত হন।
- আবুল হুযাইল আল-আল্লাফ ও আল-নাজ্জার: তারা মুতাজিলাদের দার্শনিক চিন্তাধারাকে প্রসারিত করেন।
- আল-জাহিজ: একজন সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ, যিনি মুতাজিলাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করেছেন।
মুতাজিলা ও ইসলামের মূলধারার অবস্থান:
- আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন (৮১৩-৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ) মুতাজিলাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন এবং ‘মিহনা’ (ধর্মীয় ইনকুইজিশন) শুরু করেন, যেখানে উলামাদের কুরআন সৃষ্ট বলে স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়।
- পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে খলিফা আল-মুতাওয়াক্কিল (৮৪৭-৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) মুতাজিলা দর্শনকে দমন করেন এবং সুন্নি আশআরি (Ash’ari) ও মাতুরিদি (Maturidi) মতবাদ প্রধানধারার হয়ে ওঠে।
বর্তমান প্রভাব:
আজকের দিনে সরাসরি মুতাজিলা মতবাদ অনুসরণকারী দল নেই, তবে ইসলামের যুক্তিবাদী চিন্তাধারায় তাদের দর্শনের কিছু প্রভাব এখনো রয়েছে, বিশেষ করে আধুনিক ইসলামি দার্শনিকদের চিন্তাভাবনায়।
আপনার যদি আরও বিস্তারিত জানতে ইচ্ছা হয়, বলুন!