বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমাজকর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সমাজকর্মের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারী ক্ষমতায়ন, শিশু সুরক্ষা, পরিবেশ উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিচে এর গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা
ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি: গ্রামীণ ব্যাংক এবং অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হচ্ছে, যা দারিদ্র্য হ্রাস এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
কর্মমুখী প্রশিক্ষণ:
বেকার যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যেমন, এনজিও এবং সরকারি প্রকল্পগুলোর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
২. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি
প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার:
সমাজকর্মীদের প্রচেষ্টায় দূরদরাজ অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা পৌঁছানো হয়েছে। মেয়েদের শিক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা:
নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে এনজিও ও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে।
৩. স্বাস্থ্যসেবা
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা:
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য এবং টিকাদান কর্মসূচিতে সমাজকর্মীদের অবদান লক্ষণীয়।
সচেতনতা প্রচারণা:
পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, স্যানিটেশন, এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
৪. নারী ক্ষমতায়ন
আর্থিক স্বাধীনতা:
ক্ষুদ্রঋণ, প্রশিক্ষণ, এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে।
নারীর অধিকার রক্ষা:
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ বন্ধ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সমাজকর্মীরা কাজ করছে।
৫. শিশু সুরক্ষা ও উন্নয়ন
শিশুশ্রম নিরসন:
শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য সমাজকর্মীরা কাজ করছে।
বঞ্চিত শিশুদের পুনর্বাসন:
পথশিশু এবং এতিমদের জন্য আশ্রয়, শিক্ষা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
৬. পরিবেশ উন্নয়ন
পরিবেশ সচেতনতা:
বন সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং দূষণ কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
গণ উদ্যোগ:
সমাজকর্মীরা জনগণকে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে যুক্ত করছে, যেমন বৃক্ষরোপণ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহার।
৭. সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার
বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা:
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন আদিবাসী, হিজড়া, এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সমাজকর্মীরা ভূমিকা রাখছে।
আইনি সহায়তা:
গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
৮. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন
দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে কাজ:
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং ভূমিধসের পর দুর্গতদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সমাজকর্মীরা কাজ করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা:
পরিবেশ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জসমূহ:
পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব।
সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি।
সরকার ও এনজিওর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব।
দারিদ্র্য এবং শিক্ষার অভাবে জনগণের সচেতনতার ঘাটতি।
উপসংহার:
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমাজকর্ম একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। তবে, এর কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সমাজকর্মের গতি-প্রকৃতি আরও উন্নত হলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।