মাসিক শেষ হওয়ার ১০-১১ দিন পরেও যদি রক্তপাত বা দাগ দেখা যায় এবং রঙ হলুদ বা বাদামী হয়, তবে এটি একাধিক কারণে হতে পারে। এর পেছনে স্বাভাবিক কারণ যেমন হরমোনাল পরিবর্তন, অথবা চিকিৎসার প্রয়োজন এমন কারণ থাকতে পারে।

সম্ভাব্য কারণসমূহ:

১. অভিশিষ্ট রক্ত (Old Blood):

মাসিক শেষ হওয়ার পর জরায়ুতে কিছু রক্ত জমে থাকতে পারে, যা ধীরে ধীরে বের হয়।

এই রক্ত বাদামী বা হলুদ রঙের হতে পারে, কারণ এটি পুরনো এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসেছে।

২. হরমোনাল অসামঞ্জস্যতা:

ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে মধ্যচক্রে (ovulation এর সময়) হালকা রক্তপাত হতে পারে।

হরমোনাল পরিবর্তনগুলো মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস বা ওষুধের কারণে হতে পারে।

৩. ওভুলেশন ব্লিডিং:

ওভুলেশনের সময় (মাসিক চক্রের মাঝামাঝি) হালকা রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক।

এটি সাধারণত ১-২ দিন স্থায়ী হয় এবং কোনো গুরুতর সমস্যা নয়।

৪. ইনফেকশন বা প্রদাহ:

জরায়ু বা প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণ (যেমন, Bacterial Vaginosis, Pelvic Inflammatory Disease) এর কারণে এই ধরনের রক্তপাত হতে পারে।

ইনফেকশনের সঙ্গে খারাপ গন্ধযুক্ত স্রাব, ব্যথা বা জ্বালা থাকতে পারে।

  1. জরায়ুতে পলিপ বা ফাইব্রয়েড:

জরায়ুর পলিপ বা ফাইব্রয়েড মাঝেমধ্যে রক্তপাতের কারণ হতে পারে।

এটি সাধারণত অতিরিক্ত রক্তপাত বা অনিয়মিত চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়।

৬. গর্ভধারণ বা গর্ভপাত সম্পর্কিত সমস্যা:

কখনো কখনো, গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে (implantation bleeding) এই ধরনের রক্তপাত দেখা যেতে পারে।

অসম্পূর্ণ গর্ভপাত হলেও এই রকম হতে পারে।

৭. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, হরমোন থেরাপি বা অন্য কোনো ওষুধ মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে।


আপনার করণীয়:

১. নিজে থেকে যা করতে পারেন:

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং শরীর হাইড্রেটেড রাখুন।

যদি রক্তপাত খুব হালকা হয় এবং কোনো ব্যথা বা অসুবিধা না থাকে, তবে ১-২ দিন পর্যবেক্ষণ করুন।

২. ডাক্তার দেখার সময়:

যদি রক্তপাত ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়।

তীব্র ব্যথা, গন্ধযুক্ত স্রাব, বা জ্বালা থাকলে।

আপনার মাসিক চক্র নিয়মিত না হয় বা ক্রমাগত অনিয়মিত থাকে।

৩. ডাক্তারের পরামর্শ:

ডাক্তার সম্ভবত নিচের পরীক্ষা করতে পারেন:

আল্ট্রাসোনোগ্রাফি (Ultrasound): জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা দেখার জন্য।

হরমোনাল প্রোফাইল টেস্ট: হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য।

ইনফেকশনের জন্য টেস্ট: যোনি বা জরায়ুর ইনফেকশন পরীক্ষা।

উপসংহার:

যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বারবার হয়, তবে দেরি না করে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন। এতে সমস্যার মূল কারণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যাবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।