নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া একেবারে প্রাকৃতিক ও সহজাত। এটা আল্লাহ প্রদত্ত মানবিক প্রবৃত্তি (ফিতরা)। কোরআনেও বলা হয়েছে:
“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।”
(সূরা আর-রূম, আয়াত ২১)
তাহলে প্রশ্ন উঠে:
যেখানে আকর্ষণ ও ভালোবাসা আল্লাহ নিজেই সৃষ্টি করেছেন, সেখানে প্রেমে পড়া বা বিয়ের আগে কাউকে ভালোবাসা কি করে হারাম হয়?
এই প্রশ্নের উত্তরটা বুঝতে হলে আমাদেরকে “প্রবৃত্তি” আর “প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের নীতি” এই দুইটাকে আলাদা করে দেখতে হবে।
১. আকর্ষণ হারাম নয়, কিন্তু কীভাবে তার প্রতিক্রিয়া দিই – সেটাই আসল বিষয়
ইসলামে আকৃষ্ট হওয়া (Feeling of love/attraction) কখনোই পাপ না। এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়।
কিন্তু আকর্ষণের কারণে যদি কেউ:
- গোপনে প্রেম করে
- নিয়মিত যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ, মেসেজিং চালায়
- হৃদয় ও চরিত্র হারিয়ে ফেলে
- শারীরিক সম্পর্ক বা মানসিক নেশায় জড়িয়ে পড়ে
তাহলেই সেটা হারাম বা গুনাহ হয়ে দাঁড়ায়।
২. প্রেম মানেই পাপ নয় — কিন্তু অবাধ প্রেম, লুকোচুরি আর শরীর কেন্দ্রিক সম্পর্ক হারাম
ইসলামে প্রেম মানে যদি হয়:
- একে অপরকে শ্রদ্ধা করা
- সম্মানের সাথে দূরত্ব রেখে ভালো লাগা লালন করা
- পরিবার ও সমাজকে সম্মান দিয়ে সঠিক সময়ে বিয়ে করার চেষ্টা করা
তবে সেটা পাপ নয়। বরং এমন অনুভূতিকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া আল্লাহর পছন্দ।
৩. ইসলামে কেন এত কড়াকড়ি?
কারণ প্রেম খুব সহজেই:
- হারামের পথে যায় (শারীরিক সম্পর্ক, লুকিয়ে মেলামেশা)
- মন ও ঈমান দুর্বল করে দেয়
- সামাজিক ও পারিবারিক সংকট তৈরি করে
এই কারণেই ইসলাম প্রবৃত্তিকে অস্বীকার না করে, সেটাকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য বিয়েকে উৎসাহ দেয়।
৪. উদাহরণ: আগুন ও আগুনের নিয়ন্ত্রণ
যেমন আগুন কাজে লাগে রান্না বা আলোকের জন্য, কিন্তু যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তাহলে তা ঘর পুড়িয়ে দিতে পারে।
ঠিক তেমনই, প্রেমও উপকারী—যদি তা সীমার মধ্যে থাকে। না হলে তা আত্মা, চরিত্র, সম্পর্ক সবকিছু জ্বালিয়ে দিতে পারে।
উপসংহার:
প্রেমে পড়া পাপ নয়। প্রেমকে হারামের রাস্তায় নিয়ে যাওয়া – সেটাই পাপ।
ইসলাম প্রেমকে না বলছে না, বরং প্রেমকে বিয়ের মাধ্যমে হালাল ও পবিত্র করে নিতে বলছে।