পর্দার আয়াত ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা নারীদের শালীনতা বজায় রাখা ও পুরুষদের দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেয়।

পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট:

মদিনায় হিজরতের পর যখন ইসলামী সমাজ গঠিত হচ্ছিল, তখন কিছু সামাজিক সমস্যার সমাধান দিতে আল্লাহ তাআলা পর্দার বিধান নাজিল করেন।

মূল প্রেক্ষাপট:

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর পরামর্শ। তিনি একাধিকবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলেছিলেন যে, নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের উচিত অন্য পুরুষদের থেকে আড়ালে থাকা। এরপর আল্লাহ তাআলা পর্দার বিধান সংক্রান্ত আয়াত নাজিল করেন।

মূল আয়াত:

১. সূরা আহযাব (৩৩:৫৩) – নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবী (সা.)-এর ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করা হয়, কিন্তু তোমরা আহ্বান করা হলে প্রবেশ করো এবং যখন তোমরা আহার সম্পন্ন করো, তখন চলে যাও এবং কথা বলার জন্য বসে পড়ো না। এটা নবীকে কষ্ট দেয়, কিন্তু তিনি তোমাদের লজ্জার কারণে কিছু বলেন না, আর আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জা করেন না। যখন তোমরা নবীর স্ত্রীদের কাছে কিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে, এতে তোমাদের হৃদয় ও তাদের হৃদয় অধিক পবিত্র থাকবে…” (সূরা আহযাব ৩৩:৫৩)

২. সূরা আহযাব (৩৩:৫৯) – সকল মুসলিম নারীর জন্য পর্দার বিধান

“হে নবী! তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন নিজেদের চাদরের একাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চিনতে সহজ হবে এবং তারা উত্ত্যক্ত হবে না…” (সূরা আহযাব ৩৩:৫৯)

এই আয়াতটি নাজিলের অন্যতম কারণ ছিল, কিছু মুনাফিক ও কুচক্রী লোকেরা মদিনার নারীদের উত্ত্যক্ত করত। আল্লাহ তাআলা নারীদের পরিচিতি স্পষ্ট করতে এবং সম্মান রক্ষার জন্য তাদেরকে চাদর ও পর্দার নির্দেশ দেন।

৩. সূরা নূর (২৪:৩১) – নারীদের পর্দা ও দৃষ্টি সংযমের নির্দেশ

“আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা প্রকাশ পেতে পারে (মুখমণ্ডল ও হাত)… এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপর ফেলে রাখে…” (সূরা নূর ২৪:৩১)

উপসংহার:

  • পর্দার আয়াত মূলত মদিনায় ইসলামী সমাজ গঠনের সময় নাজিল হয়।
  • এর পেছনে মূল কারণ ছিল নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • এটি শুধু পোশাকের পর্দা নয়, দৃষ্টি সংযত রাখার বিধানও অন্তর্ভুক্ত।

অর্থাৎ, ইসলামে পর্দার বিধান শুধু নারীদের জন্য নয়, বরং পুরুষদের জন্যও সংযমের নির্দেশ রয়েছে।