ডায়াবেটিস (বিশেষ করে টাইপ ২) সম্পূর্ণভাবে চিরতরে দূর করার কোনো নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা নেই, তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে রক্তের শর্করা স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা যায়, যা প্রায় “রিমিশন” অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও রিমিশনের উপায়

১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

  • পরিমিত পরিমাণে কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খান (যেমন: শাকসবজি, বাদাম, ডাল, চিয়া সিড, ওটস)।
  • চিনি ও পরিশোধিত খাবার এড়িয়ে চলুন (যেমন: মিষ্টি, সফট ড্রিংকস, সাদা চাল, ময়দা)।
  • প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করুন (যেমন: মাছ, ডিম, বাদাম, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল)।
  • খাবারের অংশ নিয়ন্ত্রণ করুন (অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করা)।
  • ফাইবারযুক্ত খাবার খান (যেমন: সবুজ শাকসবজি, গোটা শস্য)।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

  • হাঁটা ও দৌড়ানো: প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন।
  • ওজন প্রশিক্ষণ ও রেজিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ: পেশি গঠনের মাধ্যমে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ানো যায়।
  • ইয়োগা ও মেডিটেশন: মানসিক চাপ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৩. ওজন কমানো (যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে)

ওজন কমানোর মাধ্যমে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রেই রক্তের শর্করা স্বাভাবিক হতে পারে।

৪. স্ট্রেস কমানো ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করা

  • মানসিক চাপ বেশি হলে কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
  • প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।

৫. প্রাকৃতিক ওষুধ ও হারবাল চিকিৎসা

  • তুলসী পাতাকালোজিরা রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • দারুচিনি ও মেথি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে।

৬. প্রয়োজন হলে ওষুধ ও চিকিৎসা গ্রহণ

  • ডাক্তারের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করুন।
  • নিয়মিত রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণ করুন।

ডায়াবেটিস কি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব?

টাইপ ২ ডায়াবেটিস রিমিশনে নেওয়া সম্ভব, তবে এটি নির্ভর করে আপনার লাইফস্টাইলের ওপর। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়েট ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অনেক রোগী দীর্ঘ সময়ের জন্য ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকতে পারেন। তবে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব কিনা, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

আপনার জন্য করণীয়:

আপনি যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন। খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।