মেয়েদের স্তনে ক্যান্সার হওয়ার প্রধান কারণ হলো স্তন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজন, যা টিউমার বা পিণ্ড তৈরি করে এবং তা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। স্তন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ পাওয়া গেছে যা এই রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
স্তন ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণসমূহ:
১. হরমোন ও জেনেটিক কারণ
✅ জিনগত কারণ: পরিবারের মা, বোন বা নিকটাত্মীয়ের যদি স্তন ক্যান্সার থাকে, তাহলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
✅ হরমোন পরিবর্তন: ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেশি হলে স্তন কোষ দ্রুত বাড়তে পারে, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
✅ আগে মাসিক শুরু হওয়া: যদি ১২ বছরের আগেই মাসিক শুরু হয় বা অনেক দেরিতে (৫০ বছরের পর) মেনোপজ হয়, তাহলে ঝুঁকি বাড়ে।
২. জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস
🚫 অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা – অতিরিক্ত চর্বি থেকে ইস্ট্রোজেন তৈরি হয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
🚫 অ্যালকোহল ও ধূমপান – এগুলো দেহের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
🚫 শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা – নিয়মিত ব্যায়াম না করলে শরীরে ফ্যাট জমে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. গর্ভধারণ ও বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রভাব
✅ দেরিতে প্রথম সন্তান নেওয়া (৩০ বছরের পর) – যারা অনেক দেরিতে সন্তান নেন বা নেনই না, তাদের স্তন কোষ বেশি সময় ধরে পরিবর্তিত হয়, যা ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়।
✅ বুকের দুধ না খাওয়ানো – স্তনদুগ্ধ খাওয়ালে স্তনের টিস্যু নিয়মিত পরিবর্তিত হয়, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪. অন্যান্য কারণ
🚫 হরমোন থেরাপি (Hormone Replacement Therapy – HRT) – অনেক নারী মেনোপজের পর হরমোন থেরাপি নেন, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
🚫 রেডিয়েশন এক্সপোজার – অতিরিক্ত এক্স-রে বা কেমিক্যাল এক্সপোজার স্তনের কোষে ক্ষতি করতে পারে।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ:
✅ স্তনে চাকা বা গুটির মতো অনুভব হওয়া
✅ স্তনের আকার বা আকৃতি পরিবর্তন
✅ স্তনের ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা শক্ত হয়ে যাওয়া
✅ স্তনের নিপল থেকে অস্বাভাবিক স্রাব বা রক্তপাত
✅ বগলের নিচে লিম্ফ নোড (গুটির মতো) ফোলা
প্রতিরোধের উপায়:
✔ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন
✔ স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন (শাকসবজি, ফলমূল, প্রোটিন)
✔ ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
✔ নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করুন (Self-Examination)
✔ ৪০ বছর বয়সের পর নিয়মিত ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা করানো ভালো
যদি স্তনে অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে, তত ভালোভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।