১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মূল কারণ ছিল পাকিস্তানি সামরিক শাসন, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণমূলক নীতি, এবং বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। প্রধান কারণগুলো হলো—
১. শাসন ও শোষণ
- পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার খর্ব করেছিল।
- পূর্ব পাকিস্তান থেকে আয় করা রাজস্বের বড় অংশ পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হতো।
- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দমন করা হয়।
২. আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন
- ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সংকুচিত করেন।
- ১৯৬২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করেন।
৩. ছয় দফা আন্দোলন (১৯৬৬)
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরদার করে।
- সরকার দমন-পীড়ন চালালে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়।
৪. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (১৯৬৮)
- শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
- ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে।
৫. ছাত্র আন্দোলন ও ১১ দফা দাবি (১৯৬৯)
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে আন্দোলন চালায়।
- ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ড এবং ২৪ জানুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার পর আন্দোলন আরও বেগবান হয়।
ফলাফল:
- ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
- ২৫ মার্চ ১৯৬৯, আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন ও ক্ষমতা ইয়াহিয়া খানের হাতে হস্তান্তর করেন।
- এই গণঅভ্যুত্থানই ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পথ সুগম করে।