
মানুষের মনের গভীর অনুভূতি, আকর্ষণ আর ভালোবাসা – সবই আল্লাহ প্রদত্ত এক সহজাত প্রবৃত্তি। নারী ও পুরুষ একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবে, কারো প্রতি ভালো লাগা তৈরি হবে – এটা স্বাভাবিক এবং মানবিক। তাহলে প্রশ্ন আসে, যদি এই প্রেমে কোনো শারীরিক সম্পর্ক না থাকে, আর ভালোবাসা হয় সম্মান ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে, তাহলে ইসলামে তা কেন হারাম বা মহাপাপ (গুনাহ) বলা হয়?
এই প্রশ্ন শুধু আধুনিক তরুণ প্রজন্ম নয়, বহু ধর্মপ্রাণ মানুষকেও ভাবিয়ে তোলে। আজ আমরা বিষয়টা বিশ্লেষণ করবো ধর্ম, সমাজ ও নৈতিকতার আলোকে।
প্রেম: প্রবৃত্তি না পাপ?
ইসলাম কখনোই প্রেম বা ভালোবাসাকে অস্বীকার করেনি। বরং কোরআনে বলা হয়েছে:
“তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি হলো, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।”
(সূরা আর-রূম, আয়াত ২১)
এই আয়াত আমাদের বলে যে ভালোবাসা, শান্তি ও পারস্পরিক আকর্ষণ একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলাম চায় এই ভালোবাসা সীমার মধ্যে, নৈতিক ভিত্তিতে ও সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে হোক। তাই প্রেম নয়, প্রেমের প্রকাশ ও পথ যদি ভুল হয় – তখনই সেটা হারাম হয়।
কেন বিয়ের আগে প্রেম প্রশ্নবিদ্ধ?
১. গোপনতা ও অসততা: প্রেম যদি পরিবার, সমাজ ও অভিভাবকদের অজ্ঞাতে হয়, তবে তা গোপন ও অসততার পথে নিয়ে যেতে পারে।
- মানসিক-শারীরিক ঝুঁকি: প্রেমে আবেগ প্রবল হয়। অনেক সময় শরীরঘনিষ্ঠতা ছাড়াও এমন মানসিক আসক্তি তৈরি হয়, যা ভুল সিদ্ধান্ত বা মানসিক আঘাতের কারণ হতে পারে।
- ফিতনা ও পরীক্ষার পথ: ইসলাম চায় মুসলিম নারী-পুরুষ নিজেদের চরিত্র, দৃষ্টি ও সম্পর্ককে সংযত রাখুক। প্রেমে অনেক সময় এমন কথা, দেখা-সাক্ষাৎ, অনুভব তৈরি হয়, যা সীমা ছাড়িয়ে যায়।
- প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ: আকর্ষণ থাকলেও মানুষকে সংযত থাকার জন্য পরীক্ষা করা হয়। ইসলাম মনে করে, নিজেকে সংযত রেখে বৈধ পথে এগোনোই হচ্ছে প্রকৃত সফলতা।
তাহলে কি প্রেম করে বিয়ে করা যাবে না?
ইসলাম প্রেম করে বিয়ে নিষিদ্ধ করেনি – যদি সেটা হয়:
চরিত্র রক্ষার মধ্য দিয়ে
পরিবারকে জানিয়ে
শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া
বিয়ের উদ্দেশ্য ও সম্মান বজায় রেখে
হযরত খাদিজা (রা.) এবং রাসূল (সা.)-এর সম্পর্কও ভালোবাসার নিদর্শন। পার্থক্য হলো, সেই ভালোবাসা ছিল শালীন, সম্মানজনক ও বৈধ পথে।
উপসংহার
প্রেম কোনো পাপ নয়। এটি আল্লাহর দেওয়া এক অনুভূতি।
তবে প্রেমের নামে যদি সীমা লঙ্ঘন হয়, গোপনতা, চরিত্রহানি বা শরীরকেন্দ্রিকতা তৈরি হয় – তখনই সেটা হারামে রূপ নেয়।
ইসলাম চায় ভালোবাসা হোক হালাল, বৈধ ও স্থায়ী – আর তার একমাত্র রাস্তা হলো বিয়ে।
তাই প্রেম করো, কিন্তু আল্লাহকে ভয় করে, নিজের সম্মান ও চরিত্র বাঁচিয়ে, বিয়ের পথেই নিয়ে যাও।