সারসংক্ষেপ

দ্রাব্যতা (solubility) হলো কোনও পদার্থ (solute) নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকে (solvent) দ্রবীভূত হয়ে সুঠাম (homogeneous) দ্রবণ গঠনের ক্ষমতা, যা সাধারণত ঘনত্বের এককে (যেমন প্রতি লিটার দ্রাবকে গ্রাম) মাপা হয় । দ্রাব্যতা তাপমাত্রা, চাপ ও দ্রাবকের প্রকৃতি (যেগুলোর মধ্যে pH অন্যতম) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
pH–এর পরিবর্তন বিশেষভাবে Sparingly soluble লবণগুলোর দ্রাব্যতাকে প্রভাবিত করে: দুর্বল অ্যাসিডের কার্বনেট, অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইড লবণগুলোর দ্রাব্যতা অ্যাসিডিক পরিবেশে বেড়ে যায়, কারণ অ্যানিয়নগুলো প্রোটন গ্রহণ করে আরও দ্রবণীয় যৌগে রূপান্তরিত হয় ।


দ্রাব্যতা (Solubility)

সংজ্ঞা

  • দ্রাব্যতা হলো সেই গুণ, যার ফলে একটি পদার্থ নির্দিষ্ট দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়ে (solute) সার্বত্রিক সমাধান (solution) তৈরি করে ।
  • অপরদিকে, অপর্যাপ্ত দ্রবণ গঠনের অক্ষমতাকে “insolubility” বলা হয় ।

পরিমাপ

  • দ্রাব্যতা সাধারণত ‌“saturated solution”–এ দ্রবীভূত সর্বোচ্চ solute এর ঘনত্ব হিসেবে (গ্রাম solute প্রতি 100 g solvent বা প্রতি লিটার solvent) প্রকাশ করা হয় ।
  • কিছু ক্ষেত্রে দুই তরল সম্পূর্ণ মিশে গেলে (miscible) দ্রাব্যতার কোনো সীমা থাকে না (যেমন methanol-water) ।

pH–এর উপর দ্রাব্যতার প্রভাব

pH–এর ভূমিকা মূলত Le Chatelier–এর নীতির মাধ্যমে বোঝা যায়: দ্রবণে যদি কোনো লবণ আংশিক মাত্রায় দ্রবীভূত হয় এবং তার অ্যানিয়ন দুর্বল অ্যাসিডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়, তবে পরিবেশের pH–এ হ্রাস ঘটলে দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায় ।

দুর্বল অ্যাসিডের লবণ

  • যেমন CaCO₃, MgCO₃ বা Fe(OH)₃–এর মতো লবণগুলো Sparingly soluble; pH কমলে (অর্থাৎ H⁺ বৃদ্ধি পেলে) CO₃²⁻ বা OH⁻ অ্যানিয়নগুলো HCO₃⁻ বা H₂O–তে রূপান্তরিত হয়ে দ্রবণীয় হয়, ফলে লবণের Kₛₚ–এর শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আরও Ca²⁺ বা Fe³⁺ দ্রবীভূত হয় ।

দুর্বল বেসের লবণ

  • অনুরূপভাবে, যদি কোনো লবণের ক্যাথিয়ন দুর্বল মৌলিক (weak base) হয় (যেমন NH₄⁺–যুক্ত লবণ), তবে pH বাড়লে (অর্থাৎ OH⁻ বৃদ্ধি পেলে) সেই ক্যাথিয়ন প্রোটন হারিয়ে ঐনিয়নে রূপান্তরিত হয়ে দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায় ।

শক্তিশালী অ্যাসিড ও ক্ষার লবণ

  • Cl⁻, NO₃⁻, SO₄²⁻–এর মতো শক্তিশালী অ্যাসিডের অনুকূলক এবং Na⁺, K⁺–এর মতো শক্তিশালী ক্ষারের ক্যাথিয়নসহ লবণগুলোর দ্রাব্যতা pH–এ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না ।

উদাহরণসমূহ

  1. CaCO₃ (চুনাপাথর):
    • সাধারণ জল-দ্রাবণে খুব কম দ্রাবীভূত হয় (~0.015 g/L @25 °C) ।
    • pH ~5–6–এ H⁺ আক্রমণে CO₃²⁻ → HCO₃⁻ রূপান্তরিত হয়ে দ্রাব্যতা শতগুণ বেড়ে ~0.1 g/L–এরও বেশি হতে পারে ।
  2. Fe(OH)₃:
    • উচ্চ pH–এ Fe³⁺ + 3 OH⁻ → Fe(OH)₃ হিসেবে কঠিন ফেলে, pH কমালে Fe(OH)₃ + 3 H⁺ → Fe³⁺ + 3 H₂O. ফলে Acidic পিএইচে দ্রুত দ্রাবীভূত হয় ।
  3. NH₄Cl:
    • সাধারণ দ্রাবণে অত্যন্ত দ্রবণীয়, pH পরিবর্তনের মোকাবেলায় এটির দ্রাব্যতা প্রায় অপরিবর্তিত থাকে কারণ NH₄⁺ একটি দুর্বল বেস হিসেবে প্রকৃতপক্ষে ক্ষার ধারণ করে না উল্লেখযোগ্যভাবে ।

উপসংহার

  • দ্রাব্যতা হলো দ্রাবক-দ্রবীভূত সমাধান গঠনের ক্ষমতা, যা পরিবেশের তাপমাত্রা, চাপ ও দ্রাবকের রাসায়নিক প্রকৃতি (যেমন pH) দ্বারা নিয়ন্ত্রণিত হয় ।
  • pH বিশেষ করে দুর্বল অ্যাসিড/বেসের লবণের দ্রাব্যতাকে Le Chatelier–এর নীতি অনুযায়ী পরিবর্তিত করে: অ্যাসিডিক পিএইচ দুর্বল অ্যাসিড অ্যানিয়নসহ লবণের দ্রাব্যতা বৃদ্ধি করে, আর ক্ষারীয় পিএইচ দুর্বল বেস ক্যাথিয়নসহ লবণের দ্রাব্যতা বাড়ায় ।