সারসংক্ষেপ
ত্বক, বৃক্ক ও ফুসফুস একত্রে শরীরের হোমিওস্টেসিস—বিশেষত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, তরল-অর্ন্তস্রাব (excretion) এবং অম্ল–ক্ষার (acid–base) ভারসাম্য—রক্ষা করে। ত্বক শরীরের প্রথম প্রতিরক্ষা, তাপ ও বর্জ্য পদার্থ (জল, লবণ, ইউরিয়া) বের করে; বৃক্ক রক্ত শুদ্ধ করে, ইলেকট্রোলাইট ও পানি-লবণ ভারসাম্য বজায় রাখে এবং অম্লজীবনের অতিরিক্ত H⁺ বের করে; ফুসফুস CO₂–O₂ বিনিময় করে ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরিবর্তন করে রক্তের pH নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে ।


ত্বকের ভূমিকা

১. প্রাথমিক বাধা ও সুরক্ষা

ত্বক দেহের সর্ববৃহৎ অঙ্গ, যা বাইরের পরিবেশ থেকে অভ্যন্তরীণ কলা–কোষগুলোকে বাধারক্ষা করে ।

২. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

  • রক্তনালী সংকোচন/প্রশমন: গরমে ত্বকের রক্তনালী প্রশপ্ত হয়ে রক্তের তাপ ত্বকের سطحে নিয়ে আসে; ঠান্ডা হলে সংকুচিত করে তাপ সংরক্ষণ করে ।
  • ঘাম: ঘাম নাকি পানিতে লবণ ও ইউরিয়া মিশ্রিত, যা বাষ্পীভবন হয়ে শরীর ঠান্ডা করে ।

৩. তরল ও বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণ

ত্বক মখ্মল গ্রন্থির মাধ্যমে স্বল্প পরিমাণে ইউরিয়া, লবণ ও অতিরিক্ত পানি বের করে, যা বৃক্কের ওপর কিছুটা চাপ কমায় ।


বৃক্কের ভূমিকা

১. রক্ত ফিল্ট্রেশন ও বর্জ্য অপসারণ

বৃক্ক দৈনিক ১২০–১৫০ লিটার রক্ত ফিল্টার করে, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন সহ মূত্রে বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশন করে ।

২. তরল–ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য

বৃক্ক সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড ও ক্যালসিয়াম রিইনটেক করে, অতিরিক্ত লবণ-মিশ্রিত পানি মূত্রে বের করে শরীরের পানি-লবণ ভারসাম্য বজায় রাখে ।

৩. অম্ল–ক্ষার (acid–base) নিয়ন্ত্রণ

  • ইন্টারক্যালেটেড সেলস: H⁺ স্রাব ও HCO₃⁻ রিইনটেক করে রক্তের pH ~7.4 রাখে ।
  • রেনাল কমপেনসেশন: দীর্ঘমেয়াদে অম্লজীবন সংশোধন করে, যখন শ্বাসতন্ত্র ব্যর্থ ।

ফুসফুসের ভূমিকা

১. গ্যাস বিনিময়

অলভিওলাই ঢোকার রক্তের সাথে O₂ গ্রহণ ও CO₂ ত্যাগের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসারণ করে ।

২. অম্ল–ক্ষার ভারসাম্য

  • শ্বাস-প্রশ্বাসের হার নিয়ন্ত্রণ: CO₂ মাত্রা বাড়লে শ্বাসের গতি বেড়ে CO₂ বের করে রক্তের pH বাড়ায়; কমার্ধ হলে শ্বাস ধীর করে CO₂ ধরে রাখে pH কমায় ।
  • দ্রুত কমপেনসেশন: প্রথম সারির প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্বাসতন্ত্র তড়িৎভাবে pH সংশোধন করে ।

অঙ্গসমূহের আন্তঃসম্পর্ক

১. হোমিওস্টাসিসের সম্মিলিত অভিযান

ত্বক, বৃক্ক ও ফুসফুস একসাথে কাজ করে শরীরের তাপ, তরল, ইলেক্ট্রোলাইট ও pH নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে ।

২. অম্ল–ক্ষার ভারসাম্যে সমন্বয়

  • ফুসফুস দ্রুত CO₂ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া; বৃক্ক ধীরে ধীরে H⁺ ও HCO₃⁻ হ্যান্ডল করে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে ।
  • অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে ত্বক কিছু H⁺ বের করে সামান্য সাহায্য করে ।

৩. তরল–ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য

ত্বক ও বৃক্ক একে অন্যের ওপর নির্ভর করে: ঘামের মাধ্যমে পানি–লবণ অপসারণ ও বৃক্কের তরল নিয়ন্ত্রণ একসঙ্গে শরীরকে সুষম রাখে ।

৪. সংকেত এবং সহায়তা

  • বৃক্ক থেকে সেক্রেট হওয়া ইরিথ্রোপোয়েটিন রক্তের অক্সিজেন পরিবহন বাড়ায়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা উন্নত করে ।
  • ফুসফুস–বৃক্ক যোগাযোগ: শ্বাসকষ্টে বৃক্ক অ্যাসিডিসিটি হ্যান্ডল করে, বৃক্ক অসুখে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে বর্জ্য পদার্থ মেটাবলিক দূষণ বাড়ে, পারস্পরিক প্রভাব দেখা দেয় ।

উপসংহার:
ত্বক, বৃক্ক ও ফুসফুস আলাদা অঙ্গ হলেও তাপমন্ডলী, তরল-ইলেকট্রোলাইট এবং অম্ল–ক্ষার ভারসাম্যের মাধ্যমে একে অপরের সাপোর্ট করে, শরীরের হোমিওস্টেসিস অক্ষুণ্ণ রাখে। তাদের সম্মিলিত ক্রিয়াই জনিত সুস্থতা ও স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রমের ভিত্তি।