টেস্টোস্টেরন একটি যৌন হরমোন যা যৌন বিকাশ, পেশীর ভর এবং লোহিত রক্তকোষের উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি গোনাড, মূলত অণ্ডকোষে এবং মহিলাদের ডিম্বাশয় (সামান্য) থেকে উৎপন্ন হয়। পুরুষদের টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি।

এই লক্ষণগুলি জানিয়ে দেবে যে শরীরে টেস্টোস্টরোনের মাত্রা কমে গেছে:

পেটের চর্বি বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধি

পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হলে ওজন বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে পেটের চারপাশের চর্বি অত্যধিক বেড়ে যায়। স্থূলতার কারণে হরমোনের ভারসাম্যে পরিবর্তন আসে। ফলে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমতে থাকে। চর্বির কোষ টেস্টোস্টেরনকে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তর করতে পারে, এবং এর ফলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা আরও কমে যায়।

পুনরুদ্ধারের পদ্ধতি

স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, যেমন শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, বাদাম, জিঙ্ক ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান। চিনিযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত শরীরচর্চা যেমন ভারোত্তোলন, সাঁতার, দৌড়-ঝাঁপ চর্বি পুড়িয়ে পেশী তৈরিতে সাহায্য করে এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি এবং কম শক্তি

কম টেস্টোস্টেরনের কারণে সারারাত ঘুমের পরেও শরীর ক্লান্ত থাকে। শরীরে এনার্জি থাকে না। ডায়াবিটিস বা কিডনি রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বাড়ার ফলে ক্লান্তি আরও বাড়ে।

পুনরুদ্ধারের উপায়

হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যিক। প্রয়োজনে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের কারণে উচ্চ কর্টিসলের মাত্রা টেস্টোস্টেরনকে দমন করে। মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম বা মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন খুব ভালো কাজ দেয়। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং হরমোন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।

কামশক্তি হ্রাস এবং যৌন অক্ষমতা

যৌন ইচ্ছা এবং কার্যকলাপ হ্রাসের সঙ্গে টেস্টোস্টেরন হ্রাস সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এর ফলে অণ্ডকোষের অসাড়তা, বার্ধক্য অথবা পিটুইটারি গ্রন্থি বা হাইপোথ্যালামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।

পুনরুদ্ধারের উপায়

শারীরিক কার্যকলাপ রক্ত সঞ্চালন এবং যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করতে নিয়মিত শরীরচর্চা প্রয়োজন। তবে দীর্ঘাস্থায়ী অসুস্থতা এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা একমাত্র দূর করতে পারে সঠিক চিকিৎসা। খাদ্যতালিকায় রাখুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার।

মেজাজ পরিবর্তন এবং মানসিক অস্থিরতা

কম টেস্টোস্টেরন মস্তিষ্কের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। যার ফলে বিরক্তি, উদ্বেগ, এমনকি বিষণ্ণতাও দেখা দেয়। মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়।

পুনরুদ্ধারের উপায়

খাদ্যতালিকার ভারসাম্য বজায় রাখুন। পালং শাক, স্যামন এবং আখরোটের মতো ম্যাগনেসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, মেজাজের পরিবর্তন ঘটায়। তাই অ্যালকোহল সেবন যতটা পারবেন কমিয়ে দিন। নিয়মিত শরীরচর্চা এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে, মেজাজকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।