ছোঁয়াচে রোগ কী?

ছোঁয়াচে রোগ (Infectious Diseases) হল এমন রোগ যা এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির শরীরে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, বা পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়।


প্রধান ছোঁয়াচে রোগসমূহ ও তাদের ভয়াবহতা:

১. ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu) ও সাধারণ সর্দি-কাশি

কারণ: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
সংক্রমণ: হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায়
ভয়াবহতা:

  • সাধারণত কম বিপজ্জনক হলেও শিশু, বৃদ্ধ, ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যক্তিদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
  • নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

২. কোভিড-১৯ (COVID-19)

কারণ: করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2)
সংক্রমণ: বাতাসের মাধ্যমে, শারীরিক সংস্পর্শে
ভয়াবহতা:

  • ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটিয়ে গুরুতর শ্বাসকষ্ট তৈরি করতে পারে।
  • ডেল্টা ও ওমিক্রনের মতো ভ্যারিয়েন্টগুলো দ্রুত ছড়ায় ও মৃত্যু ঘটাতে পারে।

৩. টিউবারকুলোসিস (TB / যক্ষ্মা)

কারণ: মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস
সংক্রমণ: বাতাসের মাধ্যমে
ভয়াবহতা:

  • ফুসফুস ধ্বংস করতে পারে, চিকিৎসা না করলে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে।

৪. হেপাটাইটিস বি ও সি

কারণ: হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস
সংক্রমণ: আক্রান্ত রক্ত, শরীরের তরল, যৌন সংস্পর্শ
ভয়াবহতা:

  • লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
  • অনেক সময় উপসর্গ ছাড়াই শরীরে থেকে যায়, যা আরও ভয়াবহ করে তোলে।

৫. এইচআইভি/এইডস (HIV/AIDS)

কারণ: হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV)
সংক্রমণ: রক্ত, যৌন সংস্পর্শ, মায়ের দুধ
ভয়াবহতা:

  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়, ফলে যেকোনো সংক্রমণে মৃত্যু হতে পারে।
  • এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাময় নেই, তবে ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৬. ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

কারণ: ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস
সংক্রমণ: এডিস মশার কামড়
ভয়াবহতা:

  • শরীরে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে, যা মারাত্মক হতে পারে।
  • মস্তিষ্কে সংক্রমণ ও অঙ্গ বিকল হতে পারে।

৭. জলবসন্ত (Chickenpox) ও হাম (Measles)

কারণ: ভেরিসেলা-জোস্টার ও মিজলস ভাইরাস
সংক্রমণ: সংস্পর্শ ও বাতাসের মাধ্যমে
ভয়াবহতা:

  • শিশুদের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়, মারাত্মক চুলকানি ও ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে।
  • জটিলতা তৈরি হলে নিউমোনিয়া ও মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটাতে পারে।

৮. কলেরা ও টাইফয়েড

কারণ: কলেরা (ভিব্রিও কলেরি), টাইফয়েড (সালমোনেলা টাইফি)
সংক্রমণ: দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে
ভয়াবহতা:

  • প্রচণ্ড ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • সঠিক চিকিৎসা না নিলে রক্তের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

কেন ছোঁয়াচে রোগ ভয়াবহ?

দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে – কয়েকজনের মাধ্যমে পুরো জনগোষ্ঠীতে বিস্তার ঘটতে পারে।
প্রাণঘাতী হতে পারে – নির্দিষ্ট কিছু রোগ চিকিৎসা না করলে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
অনেক সময় লক্ষণ দেরিতে দেখা দেয় – ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি না জেনেই অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে – যেমন, এইচআইভি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে।


প্রতিরোধের উপায়:

সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা – নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
টিকা গ্রহণ করা – হাম, টিবি, হেপাটাইটিস, কোভিড ইত্যাদির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন নেওয়া।
পরিচ্ছন্ন পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ – কলেরা, টাইফয়েডের মতো রোগ এড়াতে।
মশা নিয়ন্ত্রণ করা – ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে।
যৌন সচেতনতা – সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা (এইচআইভি, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে)।


সংক্ষেপে:

ছোঁয়াচে রোগগুলো খুব দ্রুত ছড়াতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই এগুলো প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।