ইসলামি শাসনের প্রয়োজনীয়তা এবং এর অমুসলিম জনগণের জন্য উপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা যেতে পারে।

১. ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা

ইসলামি শাসনের মূল ভিত্তি হলো ন্যায়বিচার ও সাম্য। কুরআন ও হাদিসে বিচার ব্যবস্থায় পক্ষপাতহীনতার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, অমুসলিমরাও ইসলামি শাসনের অধীনে ন্যায়বিচার পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, খলিফা উমরের (রা.) শাসনামলে একজন অমুসলিম ইহুদির সঙ্গে মুসলমানের বিবাদ হলে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়েছিল।

২. ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা

ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। ইসলামে বলা হয়েছে:
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ
“ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই” (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৬)

এর অর্থ, অমুসলিমরা তাদের ধর্ম মেনে চলতে পারে, উপাসনা করতে পারে, এবং তাদের সাংস্কৃতিক রীতি-নীতি বজায় রাখতে পারে। ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম শাসকরা অমুসলিমদের উপাসনালয় রক্ষা করেছে।

৩. কর ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা

ইসলামি শাসনে অমুসলিমদের উপর কর (যেমন জিজিয়া) আরোপ করা হয়, তবে এর বিনিময়ে তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সেবা পায়। এটি মুসলিমদের উপর ফরজ যাকাতের বিকল্প হিসেবে থাকে। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, অনেক অমুসলিম জিজিয়া কর দিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পেরেছে, যেখানে তাদের নিজ ধর্মীয় আইনে বিচার পাওয়ার সুযোগ ছিল।

৪. সামাজিক ন্যায়বিচার ও শোষণমুক্ত সমাজ

ইসলামি শাসনে সুদ, দুর্নীতি, এবং অভিজাত শ্রেণির একচ্ছত্র ক্ষমতা দমনের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে অমুসলিমদেরও সুবিচার নিশ্চিত হয়, কারণ রাষ্ট্র ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে।

৫. শান্তি ও নিরাপত্তা

ইসলামি আইন অপরাধ দমনে কঠোর বিধান প্রদান করে, ফলে সমাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। ইসলামী রাষ্ট্রে হত্যার বদলা হত্যা (কিসাস), চুরির জন্য হাত কাটা, মিথ্যা অপবাদ দিলে শাস্তি ইত্যাদি বিধান থাকায় অপরাধের হার কমে যায়। এটি মুসলিম এবং অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করে।

৬. পারিবারিক ও নৈতিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ

ইসলামি শাসনে সমাজের নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য অশ্লীলতা, মাদক, বেহায়াপনা, সুদ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়, যা সামগ্রিকভাবে সকল নাগরিকের জন্য একটি সুস্থ সমাজ নিশ্চিত করে।

৭. জ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ

ইসলামের স্বর্ণযুগে (৭ম-১৩শ শতাব্দী) মুসলিম শাসনে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত, দার্শনিক চিন্তাধারা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছিল, যেখানে অমুসলিম বিজ্ঞানীরাও সমান সুযোগ পেতেন।

উপসংহার

ইসলামি শাসন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো ন্যায়বিচার, শান্তি, ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়ের জন্যই কল্যাণকর হতে পারে, কারণ এটি সাম্য, স্বাধীনতা এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বাস্তব ইতিহাসে দেখা গেছে, ইসলামি শাসনামলে অনেক অমুসলিমও নিজেদের নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী মনে করেছিল।