উসমানী খিলাফতের (Ottoman Caliphate) রাজধানী তুরস্কে (মূলত ইস্তানবুলে) থাকার পেছনে ঐতিহাসিক, সামরিক ও কৌশলগত কিছু কারণ ছিল।

উসমানী খিলাফতের রাজধানী কেন তুরস্কে ছিল?

  1. ভূগোল ও কৌশলগত অবস্থান:
    • উসমানী সাম্রাজ্যের মূল কেন্দ্র ছিল আনাতোলিয়া (বর্তমান তুরস্ক), যেখানে উসমানীয়রা প্রথম শক্তিশালী হয়।
    • ইস্তানবুল (প্রাচীন কনস্টান্টিনোপল) ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা সামরিক ও বাণিজ্যিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
    • বাইজান্টাইন (রোমান) সাম্রাজ্যের পতনের পর 1453 সালে সুলতান মুহাম্মদ আল-ফাতিহ কনস্টান্টিনোপল জয় করেন এবং এটিকে উসমানী সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেন।
  2. সাম্রাজ্যের বিস্তার ও প্রশাসনিক সুবিধা:
    • উসমানী সাম্রাজ্য মূলত আনাতোলিয়া, বলকান, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বিস্তৃত ছিল। তাই ইস্তানবুল থেকে পুরো সাম্রাজ্য শাসন করা তুলনামূলক সহজ ছিল।
  3. বাগদাদ তখন দুর্বল হয়ে পড়েছিল:
    • 1258 সালে মঙ্গোলরা বাগদাদ ধ্বংস করে ফেলে এবং আব্বাসী খিলাফত কার্যত ক্ষমতাহীন হয়ে যায়।
    • পরবর্তীতে মিসরের মামলুক সুলতানরা আব্বাসী খলীফাদের আশ্রয় দেয়, কিন্তু তাদের কোনো প্রকৃত ক্ষমতা ছিল না।

উসমানীদের সঙ্গে আব্বাসী খলীফাদের সম্পর্ক

  • উসমানীয়দের উত্থানের সময় আব্বাসী খলীফারা কেবল ধর্মীয় মর্যাদার প্রতীক ছিলেন, কার্যত রাজনৈতিক ক্ষমতা মামলুক শাসকদের হাতে ছিল।
  • 1517 সালে উসমানী সুলতান সেলিম প্রথম (Selim I) মিসর জয় করে মামলুকদের পরাজিত করেন এবং শেষ আব্বাসী খলীফা আল-মুতাওয়াক্কিল III থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
  • এর মাধ্যমে উসমানীয় সুলতানরা শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, ইসলামের খলিফা হিসেবেও স্বীকৃতি পায়।

সংক্ষেপে, উসমানীয়রা তাদের শক্তির ভিত্তি তুরস্কে গড়ে তোলে, বাগদাদ তখন দুর্বল হয়ে পড়েছিল, আর উসমানী শাসকরা খিলাফতের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করায় তারা ইসলামের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করে।