ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়। এই সম্পর্ক শান্তি, ভালোবাসা এবং পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা উচিত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব হতে পারে, যা ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
নিচে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার ক্ষতির কিছু দিক তুলে ধরা হলো:
১. সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া
ঝগড়ার ফলে পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ও শান্তি নষ্ট হয়।
এটি ধীরে ধীরে সম্পর্ককে ভেঙে ফেলতে পারে।
২. পরিবারের শান্তি নষ্ট হওয়া
ঝগড়ার কারণে পরিবারের সদস্যদের (বিশেষত সন্তানদের) মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হয়।
পরিবারের মধ্যে অশান্তি স্থায়ী হলে এটি তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক ও ব্যক্তিত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. আল্লাহর অসন্তুষ্টি
ইসলাম পারস্পরিক সম্মান এবং সহমর্মিতার উপর গুরুত্ব দিয়েছে।
অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনতে পারে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম।”
(তিরমিজি, ৩৮৯৫)
৪. দাম্পত্য জীবন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা
ঘন ঘন ঝগড়া বিবাহবিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা ইসলাম খুবই অপছন্দ করে।
হাদিসে এসেছে:
“যে কাজটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত, তা হলো তালাক।”
(আবু দাউদ, ২১৭৮)
৫. শয়তানের প্রভাব বৃদ্ধি
ঝগড়া শয়তানের প্ররোচনার ফল হতে পারে। শয়তান সবসময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
“শয়তানের প্রতিনিধি এসে বলে, আমি এক দম্পতিকে ঝগড়ায় লিপ্ত করেছি। এতে শয়তান আনন্দিত হয়।”
(মুসলিম, ৭০৭৩)
৬. মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি
ঝগড়ার কারণে মানসিক চাপ বাড়ে, যা শারীরিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে।
এটি বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
ইসলামে ঝগড়া এড়ানোর উপায়
- ধৈর্য ধারণ করা:
রাগ এড়িয়ে ধৈর্য সহকারে কথা বলা।
হাদিসে এসেছে:
“সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি সে, যে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।”
(বুখারি, ৬১১৪)
- ক্ষমাশীল হওয়া:
ভুলত্রুটি ক্ষমা করা এবং অন্যকে দোষারোপ না করা।
- আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা:
সমস্যা নিয়ে ধীরে-সুস্থে আলোচনা করা।
- দোয়া করা:
আল্লাহর কাছে দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য শান্তি কামনা করা।
উপসংহার
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ এটি সম্পর্কের সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনে। ঝগড়া পরিহার করে, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সম্পর্ক পরিচালনা করা উচিত।