ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলা একটি যৌক্তিক দাবী এবং এর পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে যা নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করা যায়:

১. ইসলামের অর্থই শান্তি:

ইসলাম শব্দটি আরবি “সালাম” থেকে এসেছে, যার মানে শান্তি, নিরাপত্তা এবং Submission (আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ)। তাই ইসলাম শব্দের অর্থই শান্তি এবং শান্তিপূর্ণ জীবনের প্রতি আহ্বান।

২. ইসলামে শান্তির আহ্বান:

কুরআন ও হাদীসে শান্তির প্রতি বারবার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে:

“হে মুমিনগণ! শান্তিপূর্ণভাবে একে অপরের সাথে আচরণ করো।” (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:১০)

“বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যুদ্ধের মাঝে, শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা হবে।” (সূরা আল-বাকারা ২:২৬০)

৩. যুদ্ধের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা:

ইসলাম যুদ্ধকে শেষ পরিণতি হিসেবে গ্রহণ করে এবং যুদ্ধের সময়ে মানবিক আচরণ ও ন্যায়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়। ইসলাম যুদ্ধের সময়ও নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষা, নারী ও শিশুর নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষা করার আহ্বান জানায়।

উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধের সময়ে প্রাণী হত্যাও নিষিদ্ধ, এবং প্রতিপক্ষের উপর অত্যাচার বা অবিচার করাও ইসলাম মেনে নেয় না।

৪. সামাজিক ন্যায় ও সমতা:

ইসলামে সব মানুষের প্রতি সমান অধিকার দেয়া হয়েছে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজের প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসলামের মূল শিক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে সামাজিক ন্যায়, দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি, এবং ধনী-গরীবের মধ্যে সমতা বজায় রাখা।

৫. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা:

ইসলামে অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং শ্রদ্ধার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে:

“ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।” (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৬)

ইসলামে আদর্শভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব। মুসলিমদের কাছে ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তির প্রচার, এবং তারা বিশ্বাস করেন যে আল্লাহর প্রতি শুদ্ধ আনুগত্যই মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

৬. আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান:

ইসলামে বৈশ্বিক শান্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং মুসলমানদের দায়িত্ব হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তির প্রচার করা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে যখনই মুসলিমরা ক্ষমতায় ছিল, তারা শান্তির পক্ষে কাজ করেছে, যেমন সুলতান সালাদিনের সময়, তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং শান্তির পথে কাজ করেছিলেন।

৭. আন্তরিক দুআ এবং ক্ষমা:

ইসলামে ক্ষমা এবং দুআ (প্রার্থনা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তার জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে এবং শান্তি লাভ করতে। এভাবে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো একজন মুসলিমকে শান্তির দিকে পরিচালিত করে।

উপসংহার:

ইসলামকে “শান্তির ধর্ম” বলা একেবারে যৌক্তিক, কারণ ইসলাম শান্তি, সহিষ্ণুতা, সামাজিক ন্যায় এবং মানবাধিকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। যদিও কিছু মানুষের কর্মকাণ্ড বা ভুল ব্যাখ্যা ইসলামকে সহিংসতার ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করে, তা ইসলামের মূল শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো শান্তি, মানবতা, এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্পণ।