অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) তার বিখ্যাত বই “The Wealth of Nations”-এ করের জন্য চারটি মৌলিক নীতিমালা বা নিয়ম নির্ধারণ করেছেন। এই নীতিমালা কর ব্যবস্থাকে ন্যায়সঙ্গত, কার্যকর এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। নীতিগুলো হলো:
১. সমানতার নীতি (Principle of Equity)
মূল বক্তব্য:
প্রত্যেক নাগরিককে তার আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কর প্রদান করতে হবে।
উদাহরণ:
যার আয় বেশি, তাকে বেশি কর দিতে হবে; আর যার আয় কম, তাকে কম কর দিতে হবে।
উদ্দেশ্য:
এটি একটি ন্যায়সংগত পদ্ধতি নিশ্চিত করে, যাতে ধনী ব্যক্তিরা সমাজে বেশি অবদান রাখতে পারে।
২. নিশ্চয়তার নীতি (Principle of Certainty)
মূল বক্তব্য:
কর সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন এবং পরিমাণ স্পষ্ট ও নির্ধারিত হওয়া উচিত।
উদাহরণ:
একজন নাগরিক জানবে তাকে কত কর দিতে হবে, কবে দিতে হবে এবং কিভাবে দিতে হবে।
উদ্দেশ্য:
এই নীতি কর আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনে এবং জনগণের উপর অপ্রত্যাশিত আর্থিক চাপ কমায়।
৩. সুবিধার নীতি (Principle of Convenience)
মূল বক্তব্য:
কর সংগ্রহের সময় এবং পদ্ধতি নাগরিকদের জন্য সুবিধাজনক হওয়া উচিত।
উদাহরণ:
কর আদায় এমন সময় হওয়া উচিত যখন নাগরিকদের কাছে অর্থলাভের সুযোগ বেশি, যেমন ফসল তোলার সময় কৃষকের কাছ থেকে কর নেওয়া।
উদ্দেশ্য:
কর প্রদানের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে এবং জনগণের মধ্যে কর পরিশোধের ইচ্ছা বাড়াতে।
৪. অর্থনৈতিকতার নীতি (Principle of Economy)
মূল বক্তব্য:
কর সংগ্রহের খরচ যতটা সম্ভব কম হওয়া উচিত।
উদাহরণ:
একটি কার্যকর কর ব্যবস্থায় প্রশাসনিক ব্যয় কম হয় এবং জনগণের কাছ থেকে আদায় করা করের বড় অংশ সরকারের কাজে ব্যবহৃত হয়।
উদ্দেশ্য:
কর সংগ্রহে অযথা ব্যয় কমিয়ে সরকার ও জনগণের জন্য আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।
উপসংহার
অ্যাডাম স্মিথের এই নীতিগুলো একটি সুষ্ঠু, ন্যায়সঙ্গত এবং কার্যকর কর ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে। সমানতা, স্পষ্টতা, সুবিধা, এবং অর্থনৈতিক দিকগুলো নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি কর ব্যবস্থাকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক করে তোলা যায়।