অতিরিক্ত ঘুম (Hypersomnia) কোনো রোগ হতে পারে, আবার কিছু শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কারণেও এটি হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘুমের সম্ভাব্য কারণসমূহ:
১. শারীরিক কারণ:
- ঘুমের মান খারাপ হওয়া: রাতে পর্যাপ্ত বা গভীর ঘুম না হলে দিনের বেলায় ঘুমঘুম ভাব আসতে পারে।
- আয়রন বা ভিটামিনের ঘাটতি: শরীরে আয়রন, ভিটামিন B12, বা ডি-ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে দুর্বলতা ও ঘুম বেশি আসতে পারে।
- থাইরয়েডের সমস্যা: হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে শরীর দুর্বল ও অলস লাগে, ফলে ঘুম বেশি হয়।
- ডায়াবেটিস বা লো সুগার: রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অতিরিক্ত ঘুম আসে।
২. মানসিক কারণ:
- ডিপ্রেশন ও মানসিক চাপ: মানসিক অবসাদগ্রস্ততা থাকলে অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুমানোর প্রবণতা দেখা দেয়।
- দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ: অতিরিক্ত টেনশন থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, ফলে দিনের বেলায় ঘুম বেশি আসে।
৩. জীবনযাত্রা সংক্রান্ত কারণ:
- অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি: রাতে দেরিতে ঘুমানো বা ঘুমের রুটিন ঠিক না থাকলে দিনে ঘুম বেশি আসতে পারে।
- খাদ্যাভ্যাস: ভারী ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার বেশি খেলে ঘুমের প্রবণতা বাড়তে পারে।
৪. কিছু নির্দিষ্ট রোগ:
- নারকোলেপসি (Narcolepsy): এটি একটি স্নায়বিক সমস্যা, যেখানে ব্যক্তির হঠাৎ অতিরিক্ত ঘুম আসে এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
- স্লিপ অ্যাপনিয়া: রাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে এলে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, ফলে দিনের বেলায় ঘুম ঘুম লাগে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
- যদি প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টার বেশি ঘুম লাগে এবং তারপরও ক্লান্তি অনুভূত হয়।
- যদি দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটে বা ঘুমানোর ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়।
- যদি ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা, বা মানসিক অবসাদ থাকে।
- যদি ঘুমের পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় বা মনোযোগ কমে যায়।
অতিরিক্ত ঘুম কমানোর উপায়:
✔ নিয়মিত ঘুমানোর সময় ঠিক করা (রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা আদর্শ)।
✔ হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করা, যা শরীরকে সজাগ রাখে।
✔ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, বিশেষ করে আয়রন, ভিটামিন B12, ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।
✔ অতিরিক্ত মোবাইল ও স্ক্রিন টাইম কমানো (বিশেষ করে ঘুমের আগে)।
সংক্ষেপে:
অতিরিক্ত ঘুম কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে, তবে এটি শারীরিক, মানসিক, বা জীবনযাত্রাগত কারণেও হতে পারে। যদি এটি দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।